আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় আমার বাংলা ব্লগবাসি, কেমন আছেন আপনারা? আশা করি ভাল আছেন। সেন্টমার্টিন ভ্রমণের প্রথম পর্বে আমি শেষ করেছিলাম হোটেলে গিয়ে বিশ্রাম নেওয়া পর্যন্ত। আজ থাকছে তার দ্বিতীয় পর্ব।
হোটেলে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আমরা সমুদ্র তীরে ঘুরতে বের হলাম। হোটেলের লোকেশনটি খুবই চমৎকার ছিল। সেন্ট মার্টিনের শেষ প্রান্তে ছিল হোটেলটির অবস্থান। হোটেলের পাশেই ১৫-২০ ফিট উঁচু একটি পাহাড় মত জায়গা ছিল। এটিকে ঠিক পাহাড় বলা চলে না। সম্ভবত হোটেল কর্তৃপক্ষ কিছু মাটি এনে জায়গাটি উঁচু করেছিল। যাইহোক, সেখান থেকে নীল সমুদ্র খুব সুন্দর মতোই দেখা যায়। আমরা সেখান থেকে তীরে নেমে গেলাম। চারদিকে নীল জল চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। কক্সবাজারের পানি এত নীল ছিলনা। সারাক্ষণ মানুষের লাফালাফির কারণে সেখানকার পানি অনেকটা আমাদের মেঘনা নদীর মতোই ঘোলা ছিল। কিন্তু এখানকার জল পুরোপুরি নীল। দারুন লাগছিল দেখতে। সেন্ট মার্টিনের তীর কক্সবাজারের মত নয়। সেখানে পাথরে ভরপুর। খুব সাবধানে পা ফেলতে হয়। অন্যথায় পায়ে আঘাত লাগার সম্ভাবনা থাকে।

আমরা অনেকক্ষণ পানিতে দাফিয়ে, ফিরে এসে দুপুরের খাবার খাই। আমাদের এত তাড়া ছিলনা। কারন আমরা রাতে সেখানে থেকে পরদিন যাওয়ার কথা। বিকেলবেলা আমরা আবারো তীরে ঘুরতে বের হলাম। সেখানে সাইকেল আছে চালানোর ব্যবস্থা আছে। সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা সাইকেল চালাবো। এক অভিজ্ঞ বড় ভাই আমাদের সতর্ক করেছিল, দুজনে মিলে একটি সাইকেল নেওয়ার জন্য। কারন আমরা টানা একঘন্টা সাইকেল চালাতে পারবোনা। ভাইয়ের কথায় খুব হেসেছিলাম। ঘন্টার পর ঘন্টা সাইকেল চালানো খেলোয়ার আমি। পারবো না কেন?
সেখানে তখন ঘন্টায় সাইকেল ভাড়া ছিল ৩০ টাকা। ঘুরতে গিয়েছি, টাকার হিসাব করে লাভ আছে? আমাদের মধ্যে অনেকেই ঘন্টা হিসেবে সাইকেল ভাড়া নিয়েছিল। কিন্তু সাইকেল চালানো শুরু করার ১০ মিনিটের মধ্যেই টের পেয়ে গেলাম বড় ভাই কেন মানা করেছিল একা এক ঘণ্টা সাইকেল ভাড়া নেওয়ার জন্য। কারণ বালির মধ্যে সাইকেল চালানো বেশ কষ্টকর। ১০ মিনিটের মধ্যেই আমাদের সবার এনার্জি শেষ হয়ে যায়। কোনরকমে আমরা আরো ১০ কি ১৫ মিনিট সাইকেল চালাই। তারপর যারা যারা সাইকেল ভাড়া নিতে চেয়েছিল তাদেরকে মানা করি এবং আমাদের বেঁচে যাওয়া সময়টুকু তাদের চালানোর জন্য উৎসাহ দেই। এতে করে তাদের কিছু টাকা বেঁচে যাবে। অবশ্য টাকা বাঁচানোর জন্য কেউই সেখানে যায়নি। তবুও সাইকেল শেয়ার করে চালানোই উচিৎ।

শেষ দিকে সূর্য ডোবার আগে আমরা বেশ কিছু ছবি তুলেছিলাম। এরপর সন্ধ্যা হয়ে যায় এবং আমরা আবার হোটেলে ফিরে আসি। রাতের খাবার শেষে আমরা যার যার মোবাইল চার্জে লাগিয়ে সমুদ্র তীরে আসি। বিশুদ্ধ বাতাস এবং সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দে ফুরফুরে মন নিয়ে আড্ডা দিতে লাগলাম সবাই। আমাদের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল নিজেদের মোবাইল চার্জ করা। সেখানে বিদ্যুৎ নেই। সন্ধ্যার পর থেকে রাত দশটা পর্যন্ত জেনারেটর চালানো হয়। ওইটুকু সময়ের মধ্যেই মোবাইল চার্জ দেওয়ার সুযোগ। তাই সবাই মোবাইল চার্জে বসিয়ে আড্ডা দিচ্ছিলাম। এরপর অনেকেই হোটেলে ফিরে যায় ঘুমানোর জন্য। আমরা কয়েকজন থেকে যাই, রাতভর সেন্টমার্টিনে ঘুরবো বলে।
ভেবেছিলাম এ পর্বের মাধ্যমেই ভ্রমণ পর্ব শেষ করব। কিন্তু মনে হচ্ছে সম্ভব হবেনা। কারণ আরো কিছু কথা বাকি রয়ে গেছে। আরো দুটি দিন আমরা সেখানে থেখেছিলাম। সেখানে ঘটেছিল মজার কিছু ঘটনা। তাই বাধ্য হয়েই আরেকটি পর্বের আশ্রয় নিতে হবে। কিন্তু আমার যে ছবি সংকট! যাইহোক এই পর্ব এপর্যন্তই। ভাল থাকবেন।
